Dr. Pradip Niyogi's Blog

My write ups on a mixed bag of topics – from my perspective


Biochemic Remedy

বায়োকেমিক ওষুধ

জর্মান ডাক্তার ডঃ শুসলার লক্ষ করেন, মানব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে( system) কয়েকটি inorganic salt এর অভাব হলে বিশেষ কিছু রোগ-লক্ষণের সৃষ্টি হয়। মানব শরীরে organic salt এর কখনো অভাব ঘটে না।  এই সব inorganic salt এর সাহায্যে আমাদের শরীর  প্রয়োজনীয় organic salt তৈরি করে নেয়।

এমন   প্রধান inorganic সল্টের সংখ্যা মাত্র বারো( 12)। সেই কালে (প্রায় দেড়শ/ দুশো বছর আগে), অষ্ট্রিয়াতে নিয়ম ছিল, কেউ মারা গেলে তার দেহ post-mortem করা বাধ্যতামূলক, যাতে জানতে পারা যায় লোকটি কেন মারা গেল। শল্য-বিদ্যায় বা surgeryতে  পারদর্শী অনেক ডাক্তার ওই দেশে ছিলেন (এখনো আছেন)। মানব দেহের গঠনতন্ত্র তারা ভালভাবে জানতেন। যে অঙ্গে বা system এ যে inorganic salt প্রধানত বর্তমান, সেই salt বা লবনের অভাব ঘটলেই সেই অঙ্গে রোগলক্ষণের উৎপত্তি হয়। তখন সেই লবনটি প্রদান করলে রোগটি সারে। লবনটিকে শক্তিকৃত  (potentized) অবস্থায় প্রদান করতে হবে, না হলে রোগ সারবে না। এই হল বায়োকেমিক চিকৎসা শাস্ত্রের মূল কথা। Homeopathic চিকিৎসা-পদ্ধতি থেকে এটি আলাদা। হোমিওপ্যাথির মূল-কথা হল,”similia similibus courantur.”, অর্থাৎ “সুস্থ শরীরে কোন একটি দ্রব্য প্রয়োগে যে সকল রোগলক্ষণ উৎপন্ন হয়, সেই দ্রব্যটি ওই রোগের ওষুধ। চিকিৎসা-পদ্ধতি দুটির এখানেই মূল পার্থক্য।  উভয় পদ্ধতিতেই কোন  বিশেষ দ্রব্য শক্তিকৃত হবার পরই তার রোগ সারানোর ক্ষমতা দেখতে পাওয়া যায় এবং ওষুধে পরিণত হয়। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা দেখি  যে নুন বা লবন আমরা আহার করার সময় খাই, শক্তিকৃত হবার পর তা বিশেষ শক্তিশালী ওষুধ Natrum Muir এ পরিণত হয়। হোমিওপ্যাথিক এবং বায়োকেমিক উভয় পদ্ধতিতেই এটি একটি অত্যন্ত গুরূত্বপূর্ণ ওষুধ। এর ক্রিয়াক্ষমতা , শক্তি অনুযায়ি, গভীর ও সুদীর্ঘকাল ব্যাপি এবং মানব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে এর ক্রিয়া দেখতে পাওয়া যায়। কোন  মানুষের শরীরে যদি লবনের অভাবজনিত লক্ষণ প্রকাশ পায় এবং সে যদি খাাবার পাতে বেশি করে নুন খায়, তবে কিন্তু তার লবনের অভাব দূর হবে না, অপ্রয়োজনীয় লবন মলত্যাগে বেরিয়ে যায়, অসুখ সারে না, বরং ক্ষতি  হতে পারে, যেমন, তার রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে।

একটা উদাহরণ মনে এল। প্রায় চল্লিশ বছর আগে, বর্তমান লেখক iit, Kharagpur এ টেক-মার্কেটে বাজারে দেখেন, মৎস-বিক্রেতা জীবন মাছ কাটতে বেশ কষ্ট বোধ করছে।

জিজ্ঞাসায় জানা গেল, তার হাতের  কনুইয়ের গাঁটে এবং শরীরের একাধিক জায়গা ফুলে রয়েছে। পরিষ্কার বোঝা গেল জল জমেছে। অনেক অ্যালোপথিক চিকিৎসা হয়েছে, কাজ হয়নি। লেখক তখন সবে প্রথম একটি “বায়োকেমিক মেটিরিয়া মেডিকা” পড়ছেন। অত্যন্ত কুন্ঠার সঙ্গে তিনি জীবনকে, তিন দিন,  দিনে দুবার natrum muir 12x( দ্বাদশ শক্তি )  চারটে কোরে বড়ি লজেন্সের মত চুষে খেয়ে দেখতে বলেন। এর কয়েক দিন পরে বাজারে গিয়ে শোনেন, ওই ওষুধে নাকি ওর আশ্চর্য উপকার হয়েছে। 

উপরেরর উদাহরণ  থেকে দেখা যাচ্ছে, শক্তিকৃত খাদ্য- লবণ বা Natrum Muir এর একটি লক্ষণ হল শরীরে  জায়গায় জায়গায় জল জমে যাওয়া। মানব শরীরের সমস্ত অঙ্গপ্রতঙ্গে  উপযুক্ত পরিমান জল সঞ্চালন  করে থাকে মানব শরীরে আগে থেকে উপস্থিত বা বর্তমান এই লবণ। কোন কারণে, কোন অঙ্গে এই লবণের অভাব ঘটলে বিশেষ রোগ -লক্ষণ দেখা যায়।যেমন, পেটে বা অন্ত্রে এর অভাব বা আধিক্য ঘটলে নানা পেটের রোগ, যেমন, পাতলা পায়খানা, ডায়ারিয়া বা কলেরা হতে পারে, গলায় বা নাকে অভাব বা আধিক্য হলে, সর্দি, কাসি, টনসিল প্রদাহ ,গলাব্যথা ইত্যাদি হতে পারে। এখানে আমরা কেবল বায়োকেমিক ওষুধের ই আলোচনা করব।

ইতিপূর্বে যে বারোটি বায়োকেমিক salt বা ওষুধের কথা বলা হয়েছে সেগুলি হলঃ

  1. ফেরাম ফস (Ferum Phos)- phosphate of ferrum  বা iron
  2. ক্যাল্ক ফস( calc.phos) বা calcium phosphate
  3. ক্যাল্ক সাল্ফ(calc.sulph} বা calcium sulphate;
  4. ক্যাল্ক  ফ্লুয়র (Calc. Fluor) বা calcium fluoride;
  5. ন্যাট্রাম ফস(Nat. Phos) বা  natrum phosphate;
  6. ন্যাট্রাম মিউর(Nat,Muir)বা natrum muriate;
  7. ন্যাট্রাম সাল্ফ(Nat. sulph) বা natrum sulph;
  8. কালি ফস(Kali Phos)বা potassium phosphate;
  9. কালি মিউর(Kali Muir) বা potassium muriate;
  10. কালি সাল্ফ( kali sulph) বা potassium sulphate;
  11. ম্যাগ ফস (mag,phos) বা magnesium phosphate;
  12. সাইলেসিয়াা (Silesia)

এগুলোর মধ্যে যে ওষুধগুলি সব সময় দরকার পড়ে, এক এক কোরে সংক্ষপে এদের গুণাবলি আলোচনা করব। তার আগে, ওষুধের ডোজ(dose)  এবং  শক্তি সম্বন্ধে একটু বলি। ডঃ শুসলারের মতে, 12X এর কম শক্তিবিশিষ্ট কোন বায়োকেমিক ওষুধ মানব দেহে প্রয়োগ করা উচিত নয়, তবে nat.phos. এবং kali. Muir. ওষুধ দুটির 6X শক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রসঙ্গত বলি, অনেক চিকিৎসক   সকল বায়োকেমিক ওষুধই  6X শক্তিতে প্রয়োগ করে থাকেন,কারন এই শক্তির ওষুধ অতিশয় দ্রুত কাজ করে। এতদ্ব্যতীত, হাঁপানি রোগে, নিম্নশক্তির ওষুধ, যেমন 3x শক্তির ওষুধ  দিলে ভাল।

 মানুষের শরীরে যে সব রোগের উৎপত্তি হয়, তাদের দুভাগে ভাগ করা যায়,অচির বা acute এবং চির বা chronic. অল্প দিন বা সদ্য যেসব রোগ সুরু হয়েছে, সেই সব ক্ষেত্রে নিম্ন শক্তির ওষুধ অর্থাৎ 6X বা 12X শক্তির ওষুধ প্রয়োগ করে ভাল ফল পাওয়া যায়; এরূপ ওষুধ এক ঘন্টা বা দুঘন্টা অন্তর দিনে তিন- চার বার রোগীকে দেওয়া চলে; তেমন প্রয়োজন হলে আধঘন্টা, এমনকি 15মিনিট অন্তর পুনঃপ্রয়োগ বা repeat করা যায়। পুরনো বা চির রোগের ক্ষেত্রে উচ্চতর শক্তি দীর্ঘক্ষণ,অন্তত চার থেকে ছয় ঘন্টা অন্তর ব্যবহার হয়ে থাকে।   

i) ফেরাম ফস – এটি অত্যন্ত দরকারি একটি ওষুধ। যে কোন রকমের আঘাত, রক্তপাত হোক বা না হোক, accident, fracture , ব্যথা, বেদনা, জ্বর, বমি, inflammation, মাথা ধরা, আগুনে পোড়া, ছ্যাঁকা লাগা, ফোস্কা পড়া ইত্যাদির প্রথম ওষুধ। শরীরে যেকোন স্থান থেকে রক্তপাত হলে এটি প্রয়োগ করতে হয়। আধকপালে মাথাধরার এটি উৎকৃষ্ট ওষুধ। অর্শ বা piles এ রক্তপাত হলে, এটি প্রথম ওষুধ।

অনেক সময় এর সঙ্গে এক বা একাধিক ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে। যেমন, চোখের পতার আঞ্জনি রোগে, প্রথমে ferr.phos 12X, এক ডোজের পর , kali muir 6X এবং Silesia 12X পর্যায়ক্রমে তিন চার ঘন্টা অন্তর অন্তর দিতে হবে, ব্যথা বেদনা সম্পূর্ন দূর না হওয়া পর্যন্ত। আগুনে পুড়ে, ছ্যাঁকা লেগে ফোস্কা পড়লে kali muir 6x এর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে তিন চার ঘন্টা অন্তর ferr phos 12x প্রয়োগে অতি সত্বর ফোষ্কা সারবে বা শুকিয়ে যাবে। যে কোন জ্বরে, nat muir12x এর সঙ্গে  ফেরাম ফস পর্যায়ক্রমে এক ঘন্টা অন্তর তিন চারটি ডোজে জ্বরের উপশম হয়। অন্যথায়, লক্ষণ অনুযায়ী, nat sulph 12x এর সঙ্গে এক ঘন্টা অন্তর অন্তর পর্যায়ক্রমে ফেরাম ফস দিলে জ্বর উপসম হয়। যে কোন রকমের accident বা আঘাত পাওয়া বা পড়ে গিয়ে চোট পেলে, ব্যথা বেদনা থাকলে এই ওষুধের প্রয়োজন। যতক্ষণ ব্যথা বেদনা থাকে বা রক্তপাত হতে থাকে ততক্ষণ ই এই ওষুধের প্রয়োজন, ব্যথা বেদনা বা inflammation, জ্বর, না থাকলে এই ওষুধ দিতে নেই, ফল মারাত্মক হতে পারে, অপ্রত্যাশিত স্থান থেকে রক্তপাত হতে পারে।  হঠাৎ বমি হলে, বা বমি বমি ভাব হলে,  এক ডোজ ফেরাম ফস দিলে বমি বন্ধ হবে বা nausea দূর হবে। টনসিল-প্রদাহ বা tonsillitis রোগের প্রধান ওষুধ এটি। conjunctivitis বা চোখ ওঠা রোগের কার্যকরি ওষুধ এটি। অনেক ক্ষেত্রে, লক্ষণ অনুযায়ি পর্যায়ক্রমে এর সঙ্গে nat.sulph. ব্যবহার করতে হয়। constipation দূর করতে এটি প্র্রথম ওষুধ, calc.phos বা kali muir এর সঙ্গে অথবা লক্ষণ অনুযায়ি kali sulph কয়েক ডোজ দেওয়া দরকার হয়। সাধারণত, এসব ক্ষেত্রে প্রথম ডোজটিই কেবল ফেরাম ফস দিতে হয়।

একটা উদাহরণ দিই; 1988 সালের কথা। আমরা তখন খড়্গপুর, iit campus এ থাাকি। গ্রীষ্মের ছুটিতে, জুন মাসে আমরা এক সপ্তাহের জন্য পুরী বেড়াতে যাই, পৌঁছাই  ভোরে। উঠি পুরী হোটেলে। একটা ভাল ঘর পেলাম। আমরা বলতে স্ত্রী বুলু, কন্যা চন্দ্রা, ও পুত্র  সূর্য ও ধ্রূব। সূর্য ক্লাস এইটে পড়ে, ধ্রূব সিক্স এএ। ব্রেকফাস্ট সেরে ঘর থেকেই দেখি বহু লোক সমুদ্রে স্নান করছে, আমরাও সবাই স্নান করতে নামলাম।  একঘন্টা দেড় ঘন্টা হয়ে গেল, হোটেলে ফিরব, সূর্যকে কিছুতেই জল থেকে ওঠানো যাচ্ছে না। ঘন্টা দুই পরে হোটেলে ফিরলাম, সবার চোখ লাল।সন্ধ্যাাবেলা মনে হল, সূর্যর জ্বর এসেছে। ডিনারের পর মনে হল জ্বর বাড়ছে, দেখতে না দেখতে ধুম জ্বর এসে গেল। থার্মোমিটার জোগাড় কোরে দেখা গেল দেড় জ্বর। রাত্রিতে কোন ডাক্তার পাওয়া গেল না। অগত্যা সময় নষ্ট না কোরে আধ ঘন্টা অন্তর অন্তর ফেরাম ফস ন্যাট্রাম মিউর দিতে থাকি। দেখতে না দেখতে জ্বর দুই, আড়াই ছাড়িয় উঠল, আমি ওষুধ ও জলপট্টি দিতে থাকলাম। রাত একটার পর জ্বর কমা সুরু করল ও রাত দুটো নাগাদ জ্বর ছেড়ে গেল। পরের দিন হোটেলে ডাক্তার দেখে বললেন, ওর টনসিলের অবস্থা খুব খারাপ,  এখনই অপারেশন করা দরকার। উনি কড়া antibiotic দেন। খড়্গপুর ফিরে আবাার জ্বর আসে, এবং septran ও অন্য antibiotic দিতে হয়। অনেক দিন লাগে পুরো সুস্থ হতেও।

ii) calc.phos বা ক্যালকেরিয়া ফস – যে সকল রোগে শরীরে ক্যালসিয়ামের দরকার সেখানেই এই ওষুধ কার্যকরি। হাড়, বা দাঁতের সর্বপ্রকার   বা যে কোন রোগে এটি দরকার। রক্তাল্পতায়, এক ডোজ ফেরাম ফসের চার ঘন্টা পর থেকে এক বা দুই সপ্তাহ রোজ এক ডোজ calc.phos. এই রোগ সম্পূর্ণ সারাতে পারে। এই ওষুধ ,খালি পেটে এক ডোজ  মলত্যাগে সহায়তা করে। সর্দি, কাশি, গলাব্যথায়  ও গলাভাঙ্গায় এই ওষুধ ব্যবহার করতে হয়, যদি নিঃসৃত সর্দি অণ্ডলালা বা egg-albumen এর মত হয়। মেরুদণ্ডের বক্রতা দূর করতে এই ওষুধ অনেকদিন এক ডোজ করে খেতে হয়। যে কোন প্রকার কাশি, বিশেষত খুকখুকে কাশি, দূর করতে, শিক্ষক, অধ্যাপক বা ধর্মযাজকদের বক্তৃতায় কাশি দূর  করতে এই ওষুধ দরকার। ফ্যারিঞ্জাইটিস, ল্যারিঞ্জাইটিস জাতীয় রোগে এই ওষুধ পুনঃপুনঃ ব্যবহার করতে হয়, অনেক সময় ফেরাম ফস ও কালি মিউর সহযোগে।

মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালে উদ্ভূত নানা রোগ এই ওষুধে সারে। ডঃকেন্টের মতে এই ওষুধ বিভিন্ন বয়সের মেয়েদের বিভিন্ন সময়ে বিশেষ বন্ধু।

iii)ক্যাল্ক ফ্লুর (Calc.fluor)-শরীরের যে কোন স্থান, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে শক্ত টিউমার এই ওষুধে সারে। দীর্ঘ দিনের পুরোনো কাাশি kali muir র সঙ্গে পর্যায়ক্রমে অনেকদিন খেলে সারে। এই ওষুধ, বিশেষত খুকখুকে কাশি দূর করে,; অনেক সময় ক্যাল্ক ফস সহযোগে খেতে হয়। দীর্ঘ দিনের পেটে জমা ময়লা, ফেরাম ফস ও ক্যাল্ক ফসের সঙ্গে খেতে হয়। 

iv) ক্যাল্ক সাল্ফ(calc.sulph)-এই ওষুধ বড় একটা দরকার হয় না, তাই এখানে আলোচনা করছি না।

v) ন্যাট ফস (natrum phos)-   প্রধানত antacid রূপে এই ওষুধের বহুল ব্যবহার হয়। শরীরের ময়লা প্রস্রাবের সঙ্গে বের করে দেওয়া এই ওষুধের একটি প্রধান কাজ। প্রস্রাবের বিভিন্ন সমস্যায় এই ওষুধের ক্রিয়া দেখা যায়। নানা ধরণের কৃমি এই ওষুধে দূর হয়, রোজ রাত্রে এক ডোজ খেতে হয়, অন্তত সপ্তাহ দুই- তিন। মুখের টক ভাব দূর করে, খাদ্য হজমে সাহায্য করে। এটি খুব হাল্কা ওষুধ, বেশি খেয়ে ফেললেও সমস্যা হয় না।

vi) ন্যাট সালফ (natrum sulphuricum)- এটি অতিশয় শক্তিশালী একটি ওষুধ। শরীরের ময়লা মলরূপে বেরিয়ে যায় এই ওষুধের ক্রিয়ায়। এটি প্রধানত লিভারের ওষুধ।নানা ধরনের লিভারের সমস্যা এই ওষুধে সারে। গলস্টোন -কলিক বা পিত্তশূলের তীব্র ব্যথা আধ-ঘন্টায় দূর হয় এই ওষুধে। নানা পেটের রোগ, যেমন, আমাশয়, ডায়রিয়া, বদহজম সহজেই দূর হয় এই ওষুধে। সর্দি-কাশির দ্বিতীয় পর্যায়ে যখন গাঢ় সবুজ বা হলুদ কফ  প্রচুর বের হতে থাকে তখন এই ওষুধ বিফল হয় না। প্রসঙ্গত, গাঢ় সাদা কফের ক্ষেত্রে ক্যাল্ক-ফস এবং কালি-মিউর প্রধানত ব্যবহৃত হয়। সঙ্গে জ্বর থাকলে, তাও সারে। তবে এক্ষেত্রে সঙ্গে অল্প ফেরাম ফস দিতে হয়। আর,  প্রথম পর্যায়ে,পাতলা জলের মত কফ ফেরাম-ফস সহযোগে ন্যাট্রাম-ম্যুরে সারে।

vii) ন্যাট-মিউর (natrum muir)-এটি অত্যন্ত শক্তিশালি একটি ওষুধ। দীর্ঘ-কালের প্রচীন রোগ ও এই ওষুধে সারে। এই ওষুধ ব্লাড-প্রেসার বা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। সর্দি-কাশি গলাব্যথা, পেটের নানাবিধ রোগে এর প্রয়োজন। অনেক সময় উচ্চ বা উচ্চতর শক্তির ওষুধ ব্যবহার করতে হয়।  মানব শরীরের সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গে  জল সঞ্চালন বা নিয়ন্ত্রণ করে এই লবণ।

উদাহরণ স্বরুপ বলি, আমি তখন সবে iit, kgp তে গণিতের অধ্যাপক রূপে কাজে যোগ দিয়েছি। এই সময় আমার স্ত্রী বুলুর পেটে ভীষণ ব্যথা শুরু হয়, অসহ্য ব্যথা। টেক হাসপাতালের একাধিক অ্যালোপথিক ডাক্তার এটি আমাশয় নির্ধারণ করে চিকিৎসা করতে থাকেন। specialist FRCS ডাক্তারকে দেখান  হলে,তিনি মাসখানেকে high dose এ আমাশার ওষুধ mexaform খেতে  দেন। ব্যথার হ্রাস না হওয়ায়, তখন টেক মার্কেটে বসতেন,  ডঃসান্যালকে দেখালে তিনি রোগটি পিত্তশূল বা gallstone colic নির্ধাারণ করেন  এবং gallbladder এর জন্য barium meal Xray করার পরামর্শ দেন। দেখা যায়, nonfunctioning gall-bladder. এই সময় ডাক্তারা  gall-bladder operation করতে বলেন। বুলুর  অপারেশনে ভীষণ ভয় ছিল, কিছুতেই  অপারেশনে রাজি হল না। অগত্যা, হাসপাতালের হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারকে দেখাই। তিনি বলেন,”অপারেশনের দরকার নেই, আমাকে তিন মাস সময় দিন, রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হবেন, কোন চিন্তা করবেন না”। তিনি লক্ষণ অনুযায়ি, ওকে nat.muir 1M(সহস্রতম শক্তি) দুই ডোজ খেতে দেন, এবং দুসপ্তাহ পরে রিপোর্ট দিতে বলেন। রোগীর আশ্চর্য উন্নতি হয়। পরের মাসে 10M শক্তির  nat.muir. প্রদান করেন।  ডাক্তারের নাম আমার এক্ষুণি মনে আসছে না। এর পর ঐ ডাক্তার অন্যত্র কাজে যোগ দেন এবং তাঁর জায়গায়  আসেন ডঃশর্মা, অসাধারণ ভাল ডাক্তার । বুলুর(রোগীর) আর কোন ওষুধের দরকার পড়েনি। আর একটি উদাহরণ মনে পড়ল। iit,kgp থেকে রিটায়ার করে, 2002 সালে বর্তমান লেখক একটা কাজে ব্যাঙ্গালোর যান। ফেরার পথে অসহ্য পেট ব্যাথা শুরু হয়, সন্দেহ হয় পিত্তশূল নয়তো! কলকাতা ফিরেও এটা সেটা চেষ্টা করেও ব্যথা কমল না। তখন যাদবপুর বাজারে হোমিওপ্যথিক ডাক্তার ডঃ দেবনাথকে দেখাই। তিনিও পিত্তশূল সন্দেহ করেন এবং লক্ষণ অনুযায়ি nat.sulph.200 দেন। ব্যাথা চলে যায়। পরবর্তি সময়ে  ঐ ওষুধেরই  উচ্চতর শক্তি প্রয়োগ করে তিনি লেখককে সারিয়ে তোলেন । পরবার্তি কালে,  পেটের ultra sonography করে দেখা যায়, লেখকের gall-bladder এ প্রচুর বড় বড় পাথর রয়েছে, তবে কোন রকম কলিসিসটাইটিস নেই। পাথরগুলো চেষ্টা কোরেও গলানো সম্ভব হয়নি(হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায়)।  

viii) কালি মিউর (Kali. Muir.) – এই ওষুধটির ও প্রায়ই  বিভিন্ন  রোগ  সারাতে প্রয়োজন হয়।  দেহ থেকে নিসৃত স্রাব দুধের ন্যায় সাদা বা হাল্কা হলুদ হলে এই ওষুধে বিশেষ উপকার লাভ করা যায়। সর্দি-কাশি গলাব্যথা, টনসিলাইটিস, আগুনে পোড়া বা ফোষ্কা পড়া ইত্যাদি অনেক রোগে ফেরাম-ফসের সঙ্গে প্রদত্ত হলে এই ওষুধ  বড় একটা ব্যর্থ হয় না। ঠাণ্ডায় রোগ বৃদ্ধি, হাত পা ঠাণ্ডা হওয়া, একটু পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়ার ইচ্ছে, ইত্যাদি লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায়। জণ্ডিস রোগে এর বহূল ব্যবহার দেখা যায়। হোমিওপথিক ওষুধ  bry.alb. র সঙ্গে কালি মিউরের মিল লক্ষণীয়।।

ix) কালি ফস–  এটি সুপরিচিত একটি নার্ভের ওষুধ, বিরাট এর গণ্ডি। নিকট আত্মীয় বিয়োগে দীর্ঘদিন  শোক ও মনঃকষ্টের কারনে যেসব রোগ মানুষকে যখন ভীষণভাবে পীড়িত করে তোলে, তখন এই ওষুধ মানুষকে সুস্থ করে তোলে ,পুনরায় কর্মক্ষম করে তোলে।  স্কুল -কলেজের নানাবিধ পরীক্ষার পূর্বে ছাত্ররা যখন মানসিক ভাবে অতিশয় ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তখন একটি বা দুটি ডোজ কালি ফস তাকে আবার চাঙ্গা করে তুলবে। একটি উদাহরণ দেবার লোভ সম্বরণ করতে পারছি না।

1985 সালের সেপ্টেম্বর  মাসের কথা। USSR Academy of Science ভারতের Indian National Science Academy কে  Contnuum Mechanics বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের  নিয়ে  ছোট একটা delegation পাঠাতে invite করে, যারা উভয় দেশের  ভবিষ্যৎ পারস্পরিক সহযোগিতার সূত্রপাত নিয়ে কথা বলবেন এবং  সোভিয়েট দেশ তাসকেন্ট সহরে, একটা symposium এ নিজেদের গবেষণা সংক্ষেপে উপস্থাপিত করবেন ও আলোচনা করবেন।  এর ফলশ্রুতি রূপে ভারত থেকে সাত জনের এক দল  সোভিয়ট দেশে যায়, যে দলে আমি একজন ছিলাম। মস্কোতে তিন দিন থেকে চতুর্থ দিন বিকেলে আমরা তাসকেন্ট পৌঁছই। লাঞ্চের পর, ওরা সাধারণত বিকেলের দিকেই লাঞ্চ করে, আমাদের বলা হল, আমরা যেন আমাদের বক্তৃতার, title, abstract এবং সংক্ষিপ্ত bio-data  ইংরেজিতে লিখে রাখি এবং পরদিন সকালে break-fast এর সময় ওদের হাতে দিই , ওরা রাশিয়ান ভাষায় অনুবাদ করে নেবে। উত্তম প্রস্তাব, কিন্তু সমস্যা হল, iit Kanpur এর  Mechanical Engg. এর Prof. Singh এর। ওর আঙ্গুলে writer’s cramp, একটি শব্দও হাতে লিখতে পারেন না, হাত অবশ হয়ে যায়। জানা গেল, উনি অনেক চিকিৎসা করিয়েছেন, কিন্তু কোন উপকার হয় নি। এটা নার্ভের রোগ। ওর সঙ্গে কথা বলে মনে হল , kali phos বা mag phos এ হয়ত উপকার হতে পারে। নিজের প্রয়োজনে কাজে লগতে পারে ভেবে আমি কিছু বায়োকেমিক ওষুধ সঙ্গে নিয়ে গেছিলাম। তার মধ্যে ঘুমের সমস্যা হলে লাগতে পারে ভেবে kali phos12X ছিল। আমি ওঁকে দুটো ডোজ কালি ফস 12x দিই, চেষ্টা করে দেখতে। আশ্চর্য ব্যাপার, পরের দিন সকালে উনি একপাতা লিখতে পেরেছেন। আমাদের দলের কোন কোন অধ্যাপক এটা নেহাৎ ই কাকতালীয় মনে করলেন, কেউ মনে করলেন নতুন ভাল পরিবেশে এসে ওঁর রোগ নিজের থেকেই সেরে গেছে, যদিও ডঃ সিং বললেন, ওঁর ধারণা এটা দুই ডোজ কালি ফস12x এর কাজ।

পরের দিন,  iisc র civil engg. এর Prof Iyengar জানতে চাইলেন, আমার কাছে Piles এর কোন ওষুধ আছে কিনা, ওঁর খুব bleeding হচ্ছে।  piles এর চিকিৎসায় কি কি ওষুধ লাগে , আমি তার বিন্দুবিসর্গও জানিনা। আমার বিদ্যা বলতে ডঃ বিজয় বসুর বাংলায় লেখা গৃহ-চিকিৎসার বই, “বায়োকেমিক মেটিরিয়াা মডিকা” পর্যন্ত। আমার অজ্ঞতার কথা ওঁকে জানালাম। রক্তপাতের  লক্ষণ জেনে, হঠাৎ কি মনে হল, ওঁকে দুই ডোজ ফেরাম ফস 12x দিলাম। আরও আশ্চর্য হলাম পরের দিন শুনে যে ওই ওষুধে ওর আশ্চর্য উপকার হয়েছে।

X) কালি সাল্ফ (Kali Sulph.)- অতিশয় শক্তিশালি এই ওষুধ, বিশাল এর ক্রিয়ার গভীরতা ও ব্যাপ্তি। চির ও অচির সব ধরণের রোগের চিকিৎসায় এর ব্যবহার হয়। পেটের নানাবিধ রোগ, দীর্ঘস্থায়ি জ্বর, constipation, সর্দি-কাশি, ইত্যাদি রোগে এর বহুল ব্যবহার হয়। রোগী অল্প ঠাণ্ডা পছন্দ করে, অল্প হাঁটা ভালবাসে, অনেকটা পালসেটিলার মত ।

রোগী অল্প ঠাণ্ডা পছন্দ করে এবং গরম ঘরে রোগের বৃদ্ধি হয়। মাথার চুল প্রচুর পরিমানে উঠতে থাকে। যে কোন প্রকার পিত্তের রোগ সারায় এই ওষুধ, অনেক সময় calc.phos, kali muir এর পর, অর্থাৎ এটি সাধারণত রোগের তৃতীয় অবস্থার ওষুধ । অনেকটা nat.sulph এর সাথে এর মিল আছে যদিও nat.sulph এর রোগী ঠাণ্ডা পছন্দ করে না এবং ঠাণ্ডায় অনেকক্ষেত্রে রোগের বৃদ্ধি ঘটে।

xi) ম্যাগ ফস– নানা প্রকার ব্যথা বেদনায় এর প্রয়োগ হয়। তীব্র ব্যথাও সারে এই ওষুধে। ক্রমাগত কাশি, দম-বন্ধ-করা কাশি ইত্যাদি নানাপ্রকার কাশিতে এই ওষুধ ম্যাজিকের মত কাজ করে। এর সঙ্গে ক্যাল্ক-ফসের মিল লক্ষণীয়। এর ক্রিয়া ফেরাম-ফসের বিপরীত ধর্মী। এই ওষুধের লক্ষণ গুলির মধ্যে একটি প্রধান হল  spasm. বিভিন্ন নার্ভের রোগের চিকিৎসায় এই ওষুধের প্রয়োজন দেখা যায়।

xii) সাইলেসিয়া– প্রধানত রোগের তৃতীয় অবস্থায় এই ওষুধের প্রয়োজন, বিশেষত যখন রোগীর আত্মবিশ্বাস এবং concentration তলানিতে এসে ঠেকে। রোগী মনের জোর ফিরে পায়। গলায়  মাছের কাঁটা ফুটলে  এই ওষুধের উচ্চ-শক্তি কাঁটা বের দেয়। সাধারণত, calc.phos ও kali muir প্রয়োগের পর ,  লক্ষণ অনুযায়ি, হয় kali sulph নয় সাইলেসিয়া দেবার প্রয়োজন হয়।

বায়োকেমিক ওষুধগুলোর গুণাগুণের সংক্ষিপ্ত আলোচনা এখানেই শেষ হল। যে কোনো বায়োকৃমিক ওষুধ প্রয়োগ করার আগে ওষুধটির হ্রাসবৃদ্ধির লক্ষণগুলির প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া দরকার।  যেমন, রোগীর ঠাণ্ডা ভাল লাগণে কিনা। kali sulph প্রয়োজন এমন রুগী অল্প ঠাণ্ডায়, খোলা হাওয়ায় হাঁটতে পছন্দ করে, কিন্তু calc phos বা nat.sulph এর রুগী এর উল্টো, তারা  শীতকাতুরে। অনেক রোগ খাবার খেলে  বা জল খেলে প্রশমিত হয়, আবার এর উল্টো লক্ষণ অর্থাৎ খাবার খেলে কিছু  ওষুধের রোগলক্ষণ বূদ্ধি পায়, যেমন, kali phos. হোমিয়পথিক মতে, এই ওষুধের সামগ্রিক ছবি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,  ও এদের বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।  যেমন, ডঃ কেন্টের বই “ Lectures on Homeopathic Materia  Medica”, তে বিস্তারিত আলোচনা আছে, পাঠকগণ দেখে নেবেন।



Leave a comment