Dr. Pradip Niyogi's Blog

My write ups on a mixed bag of topics – from my perspective


Mahatma Gandhi and Education

মহাত্মা গান্ধীর শিক্ষাজীবন ও তার প্রাসঙ্গিকতা

ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে, “ Morning shows the day”- মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর ক্ষেত্রে কিন্তু এই প্রবাদ বাক্যটি খাটে নি| কারণ, ভবিষ্যতের মহাত্মা গান্ধীকে বালক মোহনদাসের মধ্যে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না| ছোটবেলায় তার শিক্ষক বা সহপাঠীরা কেউই তাঁর প্রতিভার কোন আঁচ অনুভব করেন নি| প্রকৃতপক্ষে তিনি তখন ছিলেন রাম, শ্যাম, যদু মধুর মত অন্য দশজনের একজন| মানবতার ইতিহাসে যাঁর অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে, সেই যুগান্তকারী বিরাট পুরূষ,- সেই কর্মযোগীকে কিন্তু ছোটবেলায় বা পাঠ্যদশায় কোথাও কেউ দেখতে পায় নি| অথচ, মানুষ তৈরীর ক্ষেত্রে বাল্যকাল ও কৈশোরের অবদান সর্বাপেক্ষা বেশি এবং আমাদের  সাধারণ বিশ্বাস তিরিশ বছর বয়সের পূর্বেই তো মানুষ গড়ার কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যায়| তাই স্বভাবতঃই মনে প্রশ্ন জাগে, যিনি বাল্য ও কৈশোরে সাধারণ, উত্তরকালে  এই অসাধারণ বিরাট পুরূষে তাঁর উত্তরণ সম্ভব হল কিভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর মহাত্মা গান্ধীর শিক্ষাজীবনের মধ্যে খুঁজতে হবে|

পোরবন্দরে, প্রথম স্কুলজীবন সম্বন্ধে গান্ধিজী তাঁর আত্মজীবনী, “ My Experiments with Truth, সংক্ষেপে mewt ”, নামক বইতে লিখেছেন, “ I recollect having been put to school. It was with some difficulty that I got through the multiplication tables. The fact that I recollect nothing more of these days than having learnt, in company with other boys, to call our teacher all kinds of names would strongly suggest that my intellect must have been sluggish, and my memory raw.”(page-4, mewt).

সাত বছর বয়সে পোরবন্দর ছেড়ে বালক মোহনদাস রাজকোটে আসেন এবং প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হন| সে সম্বন্ধে আত্মজীবনীতে লিখেছেন, “As at Porbandar, so here there is hardly anything to note about my studies. I could only have been a mediocre student.”

এবার দেখা যাক, ভগবতদত্ত সৎগুণ তাঁর কি কি ছিল| বারো বছর বয়সে তিনি রাজকোট হাইস্কুলে ভর্তি হন| তার আগে যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়তেন, সেই আগের দিনগুলি সম্বন্ধে তিনি বলেছেন, “ I do not remember having ever told a lie, during this short period, either to my teachers or to my schoolmates. I used to be very shy and avoided all company. My books and my lessons were my sole companions. To be at the school at the stroke of the hour and to run back home as soon as the school closed,- that was my daily habit.”

সত্যিকথা বলা ও নিয়মানুবর্তিতা নিঃসন্দেহে সৎগুণ, কিন্তু বাল্যকালে এই সৎগুণ যাদের থাকে সৎলোক বলে উত্তরকালে হয়ত তাঁরা শ্রদ্ধা লাভ করেন কিন্তু তাঁরা সকলেই মহাত্মা গান্ধী হন না|

বারো তেরো বছর বয়সে বালক মোহনদাস দুটি বই পড়েন এবং নাটক দেখেন যা তাঁর মনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে| একটি বই হল “শ্রবণের পিতৃভক্তি”, আর অপরটি “ হরিশ্চন্দ্র” | শ্রবণের পিতৃভক্তি তিনি আদর্শ মনে করেন এবং অতঃপর তাঁর পিতৃভক্তি বাড়ে| আর “হরিশ্চন্দ্র” নাটক দেখে তাঁর মনে হয়েছিল পৃথিবীর সবাই কেন হরিশ্চন্দ্রর মত সত্যবাদী হয় না! এই নাটক দুটি তাঁকে গভীরভাবে বিচলিত করে এবং মনে গভীর দাগ টানে|

তেরো বছর বয়সে তাঁর বিবাহ হয়| সেকালে এক পয়সা দামে কিছু পুস্তিকা পাওয়া যেত, যাতে দাম্পত্য প্রণয়, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি সম্বন্ধে লেখা থাকত| এগুলো হাতে এলেই মোহনদাস আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত সবটা পড়ে ফেলতেন| এর মধ্যে যা তার ভাল লাগত না তা তিনি ভুলে যেতেন এবং যা ভাল লাগত তা কাজে পরিণত করতেন| “ Whenever I came across any of these (pamphlets), I used to go through them cover to cover, and it was a habit with me to forget what I did not like and to carry out in practice whatever I liked.” বর্তমান লেখকের বিবেচনায় গান্ধীজির বাল্য ও কৈশোরের শিক্ষার সর্বশ্রেষ্ঠ উপাদান এটাই| সৎপথে চলা এবং সৎচিন্তাকে কাজে পরিণত করা, এর থেকে বড় কাম্য আর কি হতে পারে| তাই দেখি, পরবর্তীকালে যখনই তিনি কোন কিছু সৎ, মহৎ বা গ্রহণযোগ্য বলে মনে করতেন, সঙ্গে সঙ্গে তা আপনার করে নিতেন,- কোন ভাল চিন্তা বা idea মাথায় এলে অবিলম্বে তাকে কাজে পরিণত করতে উঠে পড়ে লেগে যেতেন| কয়েকটা উদাহরণ দিয়ে আমাদের রক্তব্য পরিষ্কার করছি|

আঠারো বছর বয়সে মোহনদাস ইংলণ্ডে যান| বিদেশে নিরামিষ আহার করবেন বলে তিনি মার কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন| প্রতিজ্ঞা রক্ষার জন্য ঠিকই নিরামিষ আহার করতেন, যদিও তখন আমিষ আহারকে শ্রেয় ভাবতেন| এই সময়ে মোহনদাস সল্ট এর লেখা “Plea for vegetarianism” বইটি পড়েন| বইটি আদ্যন্ত পড়ে তিনি বিশেষ প্রভাবিত হন এবং নিরামিষ আহারের পক্ষপাতী হয়ে পড়েন| উৎসাহের সঙ্গে তিনি “The Ethics of Diet,” “Perfect way in Diet” ও অন্যান্য লেখা পড়তে থাকেন| “The result of reading all this literature was that dietetic experiments came to take an important place in my life. Health was the principal consideration of these experiments to begin with. But later on, religion became the supreme motive. (Page-35, mewt)”. আহার্য সম্বন্ধে তাঁর এই সময়কার ভাবনা-চিন্তাকে তিনি কাজে পরিণত করেন, বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকায় ও তৎপরবর্তী জীবনে|

চব্বিশ বছর বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকাতে যাওয়ার পর মোহনদাস তুলনামূলক ধর্মতত্তে আকর্ষণ বোধ করেন| এই সময় তিনি টলষ্টয়ের লেখা “The Kingdom of God is within you”, “The Gospel in Brief, What to do?” প্রভৃতি বই পড়ে মুগ্ধ হন| “ I began to realize more and more the infinite possibilities of Universal love(page -115, mewt)”. এর থেকে তাঁর মনে যে চিন্তা-ভাবনা প্রসূত হয়, তারই প্রয়োগ দেখি দক্ষিণ আফ্রিকার অহিংস সত্যাগ্রহ ও উত্তরকালের অহিংসা নীতিতে|

দক্ষিণ আফ্রিকায় একবার এক কুষ্ঠরোগী তাঁর গৃহের সামনে এলে গান্ধীজি তাকে আশ্রয় দেন ও তার শুশ্রূষা করেন এবং  পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে দেন| এই সময় তিনি অনুভব করেন যে, কোন হাসপাতালে নার্সরূপে কাজ করলে ভাল হয় এবং তিনি কালবিলম্ব না করে একটি হাসপাতালে দিনে দুঘন্টা কাজ করা আরম্ভ করেন| এসম্বন্ধে তিনি বলেন, “The experience stood me in good stead, when during the Boer war I offered my services for nursing the sick and wounded soldiers.”

বত্রিশ বছর বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে মোহনদাস সপরিবার ভারতে আসেন এবং বোম্বাইয়ে(অধুনা মুম্বাই) বাসা নেন| নতুন বাসায় যেতে না যেতেই তাঁর দশ বছরের দ্বিতীয় পুত্র খুব শক্ত অসুখে পড়ে| অসুখটা হল টাইফয়েডের সঙ্গে নিউমোনিয়া| প্রবল জ্বর সঙ্গে প্রলাপ বকা| ডাক্তার দেখে বললেন, শুধু ওষুধে কিছু হবে না, ডিম ও মুরগীর জুস খেতে হবে| নিরামিষাশী গান্ধীজি এতে আপত্তি করলেন এবং নিজেই পুত্রের “হাইড্রোপ্যাথি” মতে চিকিৎসা শুরু করলেন| ইতিপূর্বে তিনি হাইড্রোপ্যাথি সম্বন্ধে পড়াশুনা করেছিলেন,- এবার তা কাজে প্রয়োগ করলেন| দৃঢ় মনোবল এবং সত্যে অবিচল আস্হা তাঁকে এই কাজে প্ররণা দিয়েছিল|

পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে মোহনদাস একটি বই পড়েন, যা তাঁর জীবনে বিরাট পরিবর্তন আনে| বইটি হল, রাস্কিনের লেখা “Unto this last”. এর মূল কথাগুলো সম্বন্ধে আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন :

  1. That the good of the individual is contained in the good of all.
  2. That a lawyer’s work has the same value  as the barber’s in as much as all have the same right of earning their livelihood from their work.
  3. That life of labour, i.e. the life of the tiller of the soil and the handicraft’s man is the life worth living.

The first of these I knew. The second I had dimly realized. The third had never occurred to me. “Unto this last” made it as clear as daylight for me that the second and the third was contained in the first. I arose with the dawn, ready to reduce these principles to practice.(see Mewt page221).

বইটি পড়ার সাতদিনের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার ফনিক্স্ সহরে তিনি একশো একর জমির একটি ফার্ম ক্রয় করেন ও বসবাস আরম্ভ করেন| স্হির হয়, ফার্মের সকল আবাসীই কায়িক শ্রম করবেন এবং জাতি বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই মাসে তিন পাউণ্ড করে বেতন পাবেন| যদিও নানা কারণে ফনিক্সে তিনি বেশিদিন থাকতে পারেন নি, তবুও তাঁর তৎকালিন ভাবনা-চিন্তাকে তিনি ইতিমধ্যেই কাজে পরিণত করেছিলেন|

এই উদাহরণগুলি থেকে দেখা যায় যে গান্ধীজির কাছে যখনই কোন মহৎ নতুন ভাবনা আসত, তা নিয়ে তিনি নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করতেন, তা নিয়ে ভাবতেন এবং অবিলম্বে তাকে কাজে পরিণত করতেন| ফলে, এই ভাবনা-চিন্তাগুলো জড়রূপ পরিত্যাগ করে জীবন্ত হয়ে উঠত| তাদের তিনি সম্পূর্ণরূপে আপনার করে নিতেন এবং প্রকৃতপক্ষে তা তাঁর জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠত| এই পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে তিনি সত্য আবিষ্কারের আনন্দ লাভ করতেন, যে আনন্দ মনের পূর্ণাঙ্গীণ গঠণের ও বিকাশের পক্ষে প্রাণস্বরূপ|

আমরা ছোটবেলায় বহু ভাল জিনিস পড়ি বা আমাদের পড়ান হয়| বহু মহৎ ভাব, সৎচিন্তা ও উপদেশ আমরা মাস্টারমশায় বা গুরুজনদের কাছ থেকে পাই| কিন্তু এর বেশিরভাগই আমাদের এক কান দিয়ে ঢুকে অপর কান দিয়ে বেরিয়ে যায়| অবশিষ্ট থাকে কিছু অর্ধেক হজম হওয়া “জড় ভাবনা”,- দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ হোয়াইটহেড(A.N. Whitehead- Aims of Education and Other Essays) যাকে বলেছেন “Inert ideas” . এই জড় ভাবনাগুলোর মধ্যে প্রাণ নেই,-এগুলোকে আমাদের মন কখনো আপনার করে নেয় না| এদের কোন ব্যবহার আমরা আমাদের জীবনে দেখতে পাই না বা এগুলো আমাদের কোন কাজে লাগ না| এই ধরণের অর্ধেক হজম হওয়া জড় ভাবনা আমাদের মানসিক বিকাশে  সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে, কারণ জীবনের মূলমন্ত্র আবিষ্কারের আনন্দ আমরা এগুলোর মধ্যে পাই না| তাই মনের বিকাশ মাঝপথে থেমে যায়, শুকিয়ে যায়|

এই অতি প্রয়োজনীয় জীবনরস কিন্তু বালক মোহনদাস প্রচুর পরিমানে পেয়েছিলেন| তাঁর শিক্ষা জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল না| যা তিনি শিখতেন বা ভাবতেন তা জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে, প্রয়োজন অনুসারে কার্যে পরিণত করার প্রাণপণ চেষ্টা করতেন| সেগুলো সম্পূর্ণরূপে তাঁর স্বকীয় হয়ে উঠত| দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি ও মনোবল তাঁর সহায় হয়েছে| আর তাকে পরিচালিত করেছে সৎবুদ্ধি ও সত্য আবিষ্কারের আনন্দ| এভাবে জীবন দিয়ে তিনি যে শিক্ষালাভ করেছিলেন তাই তাঁকে উত্তরকালে মহাত্মা গান্ধীতে পরিণত করেছে|

উপসংহার- মহাত্মা গান্ধীর শিক্ষাজীবন সম্বন্ধে যে আলোচনা উপরে করা হয়েছে, তা আজ থেকে মোটামুটি একশত তিরিশ-চল্লিশ বছর পূর্বে পরাধীন ভারতের জনৈক সাধারণ ছাত্রের জীবন সম্বন্ধে আলোচনা, যিনি উত্তরকালে জাতির জনকের সম্মান পেয়েছেন, রবীন্দ্রনাথ যাঁকে মহাত্মা নামে ভূষিত করেছেন| ইতিমধ্যে দেশ স্বাধীন হয়েছে| স্বাধীন ভারতে তথা পশ্চিমবঙ্গে  শিক্ষা পরিস্হিতি কেমন জানতে কৌতূহল হয়| আমাদের পরম দুর্ভাগ্য স্বাধীন ভারতে শিক্ষা সবিশেষ অবহেলিত| সর্বত্র্র ক্ষমতা দখলের লড়াই চোখে পড়ে| সব কিছু হচ্ছে যেন ভোটের দিকে তাকিয়ে| ক্ষমতায় যে সরকারই আসুক না কেন, পরিস্হিতির অবনতি চোখে পড়ে| পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্হা  থেকে একটি উদাহরণ দিই|

বর্তমানে এখানকার স্কুলে, সপ্তম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত বিজ্ঞান পড়ানো বা শেখানো হয়| বিশেষকরে, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও জীববিদ্যা সপ্তম-অষ্টম শ্রেণীতে যা শিখতে হয়, তাই পুনরায় নবম ও দশম শ্রেণীত বিশদে শেখানো হয়, কোনরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই| বেশিরভাগ স্কুলেই কোন পরীক্ষগার নেই, মাস্টারমশায়রা ক্লাসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিষয়বস্তু চিত্তাকর্ষক করার চেষ্টা করেন না বা চিন্তার উদ্রেক করানোর চেষ্টা করেন না| ফলে, এই পর্যায়ের বিজ্ঞান শিক্ষা নিতান্তই নীরস কিছু কচকচানিতে পর্যবসিত হয়| ভাল নম্বর পাবার জন্য্য মুখস্হ করা আবশ্যিক হয়ে দাঁড়ায়| এইরূপ বিজ্ঞান শিক্ষা পাঠক্রমে না থাকলেই মঙ্গল হয়,- ছাত্ররা অন্তত কিছু নীরস জড়পদার্থ দিয়ে মস্তিষ্ক পরিপূর্ণ করার অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পায়| স্বাধীনতার সত্তর বছর পরে ও আমাদের স্কুলগুলোর পরিকাঠামোর নিদারুণ দৈন্যতা বড় পীড়া দেয়|

প্রসঙ্গত বলি, বহুকাল পূর্বে ফরাসি দেশে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী মাদাম ক্যুরী তাঁর জ্যেষ্ঠা কন্যা ইরেনের বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য যে ব্যবস্হা নিয়েছিলেন, তা কিন্তু খুবই তাৎপর্যপূর্ণ|(see “Madam Curie, by Eve Curie, Penguin Publication) ইরেনের ১২/১৩ বছর বয়সে মাদাম ক্যুরী ইরেন ও তার দুএকজন বন্ধুকে সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে নিয়ে যেতে সুরু করেন, প্রবল প্রতিবাদ উপেক্ষা করে, এবং নানাবিধ রাসায়নিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখান বা তাদের করতে বলেন| কি ঘটছে এবং কেন ঘটছে মেয়েরা তা সহজ বুদ্ধিতে চিন্তা ভাবনা করে উত্তর দিত এবং নিজেরাই নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নিরত থাকত| উত্তরকালে এই কন্যাটিও নোবেল পুরস্কার জয় করেন|

উপসংহারে বলি, সেই মহামানব যিনি বলতে পারেন, “আমার জীবন ই আমার বাণী”,  সেই মহাত্মা গান্ধীর শিক্ষাজীবনের চর্চা ও প্রাসঙ্গিকতা আজও বিন্দুমাত্র হ্রাস পায় নি|

 

পুনশ্চ:

 উপরের আলোচনা করতে গিয়ে যে ভাবনা মাথায় বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে তা হল, আর এক বিশ্বমানবের কথা, যিনি শান্তিনিকেতনে গাছতলায় ক্লাস নিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে ছাত্রদের যোগসূত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন| তিনি রবীন্দ্রনাথ| মাতৃভাষায় বিজ্ঞান শিক্ষার প্রথম পাঠ কেমন হবে তা তাঁর চিন্তায় ছিল| “বিশ্বপরিচয়” তার পথপ্রদর্শক| হাতে-কলমে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা থেকে শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠা করে তিনি জীবিকা নির্বাহের দিশা দেখিয়ে গেছেন| পুত্র রথীন্দ্রনাথকে কৃষিবিদ্যা শিক্ষার জন্য আমেরিকা পাঠিয়েছিলেন| আমাদের দুর্ভাগ্য রবীন্দ্রনাথ তাঁর শিক্ষাচিন্তা ও শিক্ষাদর্শনের খুব সামান্য অংশই কাজে রূপান্তরিত করে যেতে পেরেছেন, প্রধানত অর্থাভাবে| পরবর্তীকালে, রবীন্দ্র প্রয়ানের পর, যখন প্রচুর অর্থ এল, তখন আমরা আর একটি গতানুগতিক বিশ্ববিদ্যালয় পেলাম| মনে রাখতে হবে, শান্তিনিকেতনের বাল্যশিক্ষা আর এক জন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও চিন্তানায়কের সৃষ্টি করেছে যাঁর নাম অমর্ত্য সেন| রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাচিন্তা থেকে গ্রহণ করার মত কিছুই কি অবশিষ্ট নেই?

—প্রদীপ নিয়োগী



Leave a comment